নরকের বর্ণনা


নরক বর্ণনা -Goutom24.blogspot.com

  

নরক বর্ণনা


এত শুনি পরীক্ষিৎ বলি মুনিবরে। 
এতেক বৈচিত্র কেন পৃথিবীর ভিতরে। 
দয়া করি প্রভু মোরে করোহ জ্ঞাপন।
সমস্ত বিস্তৃতভাবে শুনিবার মন। 
শুকদেব বলে শুন পান্ডুবংশধর। 
সত্ত্ব রজঃ তমগুন সৃজেন ঈশ্বর।  
গুনত্রয় মানবের বন্ধন নিশ্চয়। 
গুন অনুসারে সবে ফল প্রাপ্ত হয়।
শাস্ত্রের নিষিদ্ধ কাজ করে যেই জন। 
সেই মতো ফল তারা করিবে অর্জ্জন।
যে কার্য করিয়া তারা যে নরকে যায়। 
সেসব নরক কথা বর্ণিব হেথায়।। 
শুকদেব বলে শুন কহিব এখন। 
ত্রিলোক মাঝারে এই নরক ভবন। 
কারণসলিলোপরি পাতালের তলে। 
একে একে বিরাজিত নরক সকলে। 
তাহার দক্ষিণে অগ্নিস্বাত্তা পিতৃগণ। 
স্বীয় গোত্রদ্ভব জন মঙ্গলকারণ।। 
পরম সমাধি যোগে বাস করে তথা। 
ইহাকেই সত্য বলি জানিবে সর্ব্বথা।।
সেথা যম স্বীয় ভৃত্তগণের সহিদ। 
অবস্থান করিতেছে হইয়া মিলিত। 
ভগবৎ আজ্ঞামত কিঙ্কর সহায়। 
মৃত প্রাণীদের আনে নিজ এলাকায়। 
কর্ম্ম অনুরূপ দন্ড দেয় সকলেরে।
ভগবান আজ্ঞা কিন্তু লঙ্ঘন না করে। 
একুশ নরক আছে কোন কোন মতে। 
নামরুপ লক্ষণাদি তামিশ্র অন্ধতামিশ্র
অসিপত্রবন। 
রৌরব মহারৌরব ও কৃমিভোজন।
কুম্ভীপাক কাল সূত্র তপ্তসুর্মি আর।
সন্দংশ শুকরমুক কত রূপ তার। 
বজ্র কন্টকশালী আর বৈতরণী। 
অন্ধকূপ প্রাণরোধ এইভাবে জানি।।
পুয়োদ অবীচি আর সারমেয়াদন।
অয়ঃপান লালা ভক্ষ আর বিশসন।
এ বিষয়ে মতান্তর আছে কোনমতে। 
সাতটি নরক আর আছে এ জগতে।। 
ক্ষার কর্দ্দম আর রক্ষোগণ ভোজন। 
পর্য্যাবর্তন আর অবটনিরোধন। 
শুলপ্রোত নাম এক নাম এক আর দন্দশুক।
নরক একটি আর নাম সূচিমুখ।
 আটাশ নরক হয় যাতনার স্থান। 
এক্ষণে বিস্তৃত কথা শুন মতিমান। 
যে পাপ করিলে লেনারে নরে যে নরক পায়। 
বর্ণনা করিব রাজা শুনহ তাহায়। 
পরধন পরনারী পরের নন্দন।
যেই জন বলযোগে করয়ে হরণ। 
তামিশ্র নরকে তারে যমের কিঙ্কর। 
হাত-পা বাঁধা করে নিক্ষেপ সত্বর।
অন্ধকারময় স্থান ভীষণ গহবর।
অনাহারে থাকে তথা তাড়নে কাতর।।
স্বামীরে বঞ্চনা করি তার রমণীরে। 
আনন্দেতে যেইজন উপভোগ করে।।
যমদূত গণ তারে ধরি ল'য়ে যায়। 
অন্ধতামিশ্র নামক নরকে ফেলায়।। 
বুদ্ধিভ্রষ্ট জ্ঞানহীন হয় তথা পড়ে। 
যাতনায় ছটফট সর্বক্ষণ করে।। 
পরের পীড়ন করি যেই মূড়জন। 
পালন করয়ে নিজপরিজন।
হিংসারিপু আচরণে যেই ক্রুরমতি।
রৌরব নরকে তার শীঘ্র হয় গতি।।
রুরু নামে শৃঙ্গী এক সেই স্থানে রয়।
পাপীরে ধরিয়া শৃঙ্গে সদা প্রহারয়।।
পরদেহ করে যেই নিজ দেহ পোষে।
মহা রৌরবতে সেই পরে নির্ব্বিশেষে।। 
ক্রব্যাদ নামেতে রুরু করে অত্যাচার।।
মাংসের লাগিয়া যাহা তাহার আহার।
প্রাণীহিংসা এ সংসারে করে যেই জন।। 
কুম্ভীপাকে তার গতি শুনহ রাজন। 
ভীষণ অগ্নিতে তপ্ত তৈলভার তাই।। 
পাপীরে লইয়া করে নিক্ষেপ তথায়। 
ব্রাহ্মণে যেজন হিংসে করে অপমান।। 
কালসূত্র নরকতে তাহার পয়ান। 
তাম্রময় অগ্নিদগ্ধ যেই স্থান রয়।
উত্তাপে পাপীর প্রাণ সদা দগ্ধ হয়।। 
অস্থির হইয়া করে কখন শয়ন। 
কখন উঠিয়া পুনঃ করে পর্য্যটন।।
কুল ধর্ম্ম ত্যাজি যার অম্ভে হয় মতি।
অসিপত্রবনে তার সুনিশ্চয় গতি।। 
ভীষণ যাতনা তথা সততই রয়। 
নিরাহারে পাপীজনে সদা প্রহারয়।।
অসিতুল্য তালপত্র আঘাতে তাহার। 
পাপীদেহ ছিন্নভিন্ন করে বারবার।।
অম্ভায় বিচার যদি রাজা কভু করে।
হইয়া শুকর মুখ নরকতে মরে।।
ইক্ষুদন্ডতুল্য তারে করয়ে পেষণ। 
মুর্চ্ছিত কখন করে কাতরে রোদন।।
মৎকুনাদি জীবে যেই করে পীড়াদান।
অন্ধকূপ নরকতে হয় তার স্থান।।
সেই সব জীব তারে পীরে নিরন্তর। 
অনিদ্রায় সেই কষ্ট পায় বহুতর।। 
অপরে না দিয়া খাদ্য যেই জন খায়।
পঞ্চ যজ্ঞ কভু নাহি করিবারে চায়।।
কাকতুল্য সেই জন কৃমি ভোজনতে।
পড়িয়া কত যে কষ্ট পায় নানামতে।। 
স্বয়ং হইয়া কৃমি কৃমির ভোজনে।
দিনপাত করে সেই পাপীতাপীজনে।।
ইহলোকে সেইজন চৌর্য্যবৃত্তি করে। 
অথবা যে ব্রাহ্মণের ধন অপহরে।। 
পরলোকে চর্ম্ম তার ছিন্নভিন্ন হয়।
সাঁড়াশিতে তোলে যত যমদূতচয়।।
 অগম্যাগমন করে সেই সব জন। 
কষাঘাত করে তারে যমদূতগণ।। 
উত্তপ্ত লৌহের পিন্ডে করে আলিঙ্গন।
স্ত্রীপুরুষ ভেদ কিছু না হয় এখন।। 
পশুতে যেজন হয় হেথা উপগত। 
শাল্মলীবৃক্ষতে সেই হয় আরোপিত।।
তাহারে নিক্ষেপে যমদূত বলশালী।
নরক নামেতে বজ্রকন্টকশাল্মলী।।
একালে যে রাজা করে ধর্মের লঙ্ঘন।
পরকালে বৈতরণী জলে নিমগন।। 
তাহারে ভক্ষণ করে জলজন্তু গণ।
তথাপি মরে না করে কর্ম্মের স্মরণ।। 
শুদ্রাপতি হয়ে যেই পশুতুল্য হয়। 
মৃত্যুর পরে নদীগর্ভে নিপতিত হয়।। 
বিষ্ঠা মূত্র পূয শ্লেষা পরিপূর্ণ নদী।
বীভৎস ভোজন তার লালা বিষ্ঠা আদি।।
কুকুর গর্দ্দভ সহ যে সব ব্রাহ্মণ।
মৃগায়াতে করে বৃথা পশুর হনন।।
নরক এতে পড়ে সেই নামে বিশসন।
তথায় যাতনা দেয় যমদূত গণ
অগ্নি কিংবা বিষ দিয়া গ্রাম ও বণিকে।
যে জন লুণ্ঠন করে সেই পরলোকে।।
কুকুরের রূপে তারে যমদূতগণ।
অতি উৎসাহে শেষে করিবে ভোজন।।
মিথ্যা বাক্য কোন কালে বলে যেই জন। 
পর্বত উপরে তুলি যমদূতগণ।।
অধোমুখে ছুঁড়ে তারে ফেলে নরকেতে। 
ভীষণ নরক সেই অবীচি নামেতে।। 
ব্রতধারী কেহ যদি সুরা পান করে। 
পরে সেই অয়ঃপান নরক ভিতরে।।
বক্ষস্থলে পদাঘাত করি দূতগণে।
দ্রবীভূত লৌহ ঢালে তাহার বদনে।।
অহংকারবশে যেই না করে সম্মানে।
জ্যেষ্ঠ জন্ম তপো বিদ্যা বর্ণ আর জ্ঞানে।।
জীবম্মৃত সেই ক্ষার আর কর্দ্দম নামকে।
দারুন যাতনা ভোগ করে যে নরকে।।
নরবলি দেয় কিংবা নরমাংস খায়।
রাক্ষস হইয়া সেই যমালয়ে যায়।।
কুঠারেতে তার দেহ খন্ড খন্ড করে।
আনন্দেতে রক্ত মাংস খায় পরস্পরে।।
প্রলোভনে লুব্ধ করি পশুপক্ষীগণে।
যে যন্ত্রনা দেয় দেহে কিংবা মনে।।
পরলোকে শুলাদিতে বিদ্ধ সেই হয়।
চঞ্চুধারি পাখি তারে আঘাতে নিশ্চয়।।
সর্পাদি প্রাণীরে যেই হিংসা অতি করে। 
সেই যায় দন্দ শুক নরক ভিতরে।।
যে জন প্রাণীগণে গর্ত্তে কি গোলায়।
আবদ্ধ করিয়া মনে আনন্দ যোগায়।।
সবিষ অগ্নিতে ধুমে নিরুদ্ধ করিয়া।
তাহারে মারিবে যম যন্ত্রণাদি দিয়া।।
অতিথির প্রতি যেই ক্রুদ্ধ অতিশয়।
সেই পর্য্যাবর্ত্তনেতেণ নিশ্চিত পড়য়।।
কাকপক্ষীগণ পরে তাহার নয়ন। 
তীক্ষ্ণতুন্ডে অবশ্যই করে উৎপাটন।। 
ধনেতে গর্বিত যেই অহংকারী অতি।
কৃপণ আপনি লোভ পরধন প্রতি।।
সূচিমুখ নরকতে নিপতিত হয়।
সূত্রবিদ্ধ করে দেহ যমদূতচয়।।
এইরূপ কত শত রয়েছে নরক।
অনেক রয়েছে উহ্য বলেছি কতক।।
 স্বকর্ম্মানুসারে নরকেতে যায়।
কর্ম্ম অনুযায়ী ফল পাইবে তথায়।।
শোনো রাজা পরীক্ষিৎ বলি যে বচন।
দীপ বর্ষ নদীকথা করিনু বর্ণন।।
আকাশ পর্বত আর সমুদ্র পাতাল।
দিক ও নরক গ্রহ নক্ষত্রাদি কাল।।
ঈশ্বরের স্থূল দেহ জীবের আশ্রয়।
এইগুলি হয় তাহা জানিবে নিশ্চয়।।
যথাসাধ্য বর্ণিলাম শুনিলে রাজন।
এই স্থানে পঞ্চম স্কন্দে করি সমাপন।।
ভাগবত কথা হয় অমৃত সমান।
শ্রবণে কীর্তনে পাপী পাই পরিত্রাণ।। 
সু্ভোধ রচিল গীত হরিকথা সার।
প্রমাদ ক্ষমিও সবে প্রার্থনা আমার।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন