সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাটেরিয়ালস্ এর পরিচিতি (পর্ব-৩)


সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাটেরিয়ালস্ এর পরিচিতি (পর্ব-৩) [Goutom24]
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাটেরিয়ালস্ এর পরিচিতি (পর্ব-৩) [Goutom24]


সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাটেরিয়ালস্ এর পরিচিতি (পর্ব-৩)

নমনীয়তা (Plasticity) ৪ বস্তুর যে ধর্মের জন্য বাহির হতে বল প্রয়ােগের ফলে সৃষ্ট বিকৃতি তার উপর হতে প্রযুক্ত বল অপসারণ
করলেও বিকৃত বস্তু পুনরায় তার পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসে না, বস্তুর এ ধর্মকে নমনীয়তা (Plasticity) বলে। এটা বস্তুর
হিতিস্থাপকতার বিপরীত ধর্ম। সিসা নমনীয় ধাতব পদার্থের একটি উত্তম উদাহরণ।
অনমনীয়তা (stiffness) ঃ স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে বস্তুর বিকৃতি প্রতিরােধ করার ক্ষমতাকে বস্তুর অনমনীয়তা বলা হয়। অর্থাৎ
যে ধর্মের জন্য বস্তু উল্লেখযােগ্য বিকৃতি ব্যতিরেকেই সর্বাধিক পীড়ন নিতে পারে, বস্তুর এ ধর্মকেই অনমনীয়তা (Stiffness) বলা
হয়। ইস্পাত অনমনীয় বস্তুর একটি উত্তম উদাহরণ।
প্রসার্য (Ductility) ৪ বস্তুর যে ধর্মের জন্য বস্তুকে টান প্রয়ােগ করলে উক্ত বস্তু নমনীয় সীমার মধ্যে না ছিড়ে ক্রমাগত লম্বা হতে
কে, বস্তুর এ ধর্মকে প্রসার্যতা (Ductility) বলা হয়। নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের নমুনায় টান প্রয়ােগে ছিড়া পর্যন্ত লম্বা হওয়ার শতকরা হার দ্বারা
সার্যতার পরিমাপ প্রকাশ করা হয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, তামা একটি উত্তম প্রসার্য ধাতু।
ঘাতসহতা (Maleability) ঃ বস্তুর যে ধর্মের জন্য বস্তুতে চাপ প্রয়ােগ করলে নমনীয় বিকৃতি (Plastic deformation) ঘটতে
কে অর্থাৎ চাপ প্রয়ােগে বস্তু বিচূর্ণ না হয়ে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে, বস্তুর এ ধর্মকে ঘাতসহতা (Malleability) বলে। যে বস্তুর
দর্যতা অধিক ঐ বস্তুর ঘাতসহ অত্যধিক। পেটা লােহার (Wrought iron) ঘাতসহতা অধিক বলে একে হাতুড়ি দ্বারা পিটিয়ে
টে পরিণত করা যায় ।
কাঠিন্য (Toughness) ঃ যে ধর্মের জন্য বস্তু আঘাতে অবিচল থাকে, তাকে কাঠিন্য বলা হয়। বস্তুকে আঘাত করলে আঘাতের
দু শক্তি (energy) বস্তুতে শােষিত হয় ফলে কিছু কাজ (work) হয় এবং এ কাজ গড় পীড়ন ও বিকৃতির গুণফলের সমান। ফলে যে
| অধিক পীড়ন নিতে পারে এবং এতে অধিক বিকৃতি ঘটতে পারে, তার কাঠিন্যও অধিক হয়।
ভঙ্গুরতা (Brittleness) ঃ বস্তুর যে ধর্মের জন্য বস্তুর উপর বল প্রয়ােগ করলে বিকৃতি ব্যতিরেকে বা সামান্য বিকৃতিতেই বস্তু
এর কম ঐ সকল বস্তুগুলাে ভঙ্গুর বস্তু। ঢালাই লােহা, কংক্রিট, কাচ~-এ ধরনের বস্তুর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
বলা হয়। ভঙ্গুরতা ঘাতসহতার বিপরীত, ধর্ম। যে সকল বস্তুর বিকৃতি
ফ্যাটিগ (Fatique) ৪ বস্তুর যে ধর্মের জন্য বস্তুটি পুনঃপুন ক্রিয়ারত পীড়ন প্রতিরােধে সক্ষম হয়, তাকে বস্তুর ফ্যাটিগ বা ফ্যাটিগ
বেট্রংথ (Fatigue or Fatigue strength) বলা হয়। ফ্যাটিগ টেস্টের মাধ্যমে বস্তুর ফ্যাটিগ মান নির্ণয় করা যায়। একটি তার সরাসরি
টিনে হেঁড়া বেশ কষ্টকর কিন্তু কয়েকবার এদিক-ওদিক মােচড়ানাের পর এটা সহজেই হেঁড়া যায়। ফ্যাটিগ ধর্মের জন্যই এরূপ হয়ে
স্থিতিস্থাপন ক্ষমতা (Resilience) ও স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে বস্তুর শক্তি (energy) সঞ্চয়ের ক্ষমতাকে বস্তুর স্থিতিস্থাপন ক্ষমতা
(Resilience) বলা হয়। আনুপাতিক সীমা পর্যন্ত প্রতি একক আয়তনের পীড়ন ও বিকৃতির গুণফল দ্বারা প্রাপ্ত কাজকে (work) বস্তুর
স্থিতিস্থাপন ক্ষমতা বলা হয়। অর্থাৎ, স্থিতিস্থাপন ক্ষমতা = গড় প্রয়ােগকৃত বল x বিকৃতি।
মহুর বিকৃতি (Creep) ঃ বিম, কলাম, লিন্টেল (আর.সি.সি.) ইত্যাদিতে দীর্ঘকাল যাবত অপরিবর্তনীয় স্থির বল প্রয়ােগ করা
অবস্থায় থাকলে ধীরে ধীরে এতে বিকৃতি ঘটতে থাকে। এরূপ বিকৃতিকে মন্থর বিকৃতি (Creep) বলা হয়। দীর্ঘদিন যাবৎ এরূপ
বিকৃতি ঘটতে থাকলে যন্ত্রাংশ বা কাঠামাের স্থায়িত্ব নষ্ট হয়ে যায়। কাঠামাের উপর স্থির ভার অর্পিত হওয়ার পর যে বিকৃতি দেখা
দেয় তা স্থির বিকৃতিতে থাকে অথবা এ বিকৃতির অস্থিতিস্থাপক অংশ কমে যায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিক্রান্সের পর অপরিবর্তনীয় স্থির
ভারের প্রভাবে ধীরে ধীরে বিকৃতির পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং এর প্রভাবে কাঠামাে বিনষ্ট হয়। এ দ্বিতীয় বিকৃতির স্তরকে মন্থর
বিকৃতি (Creep) বলা হয়।
তাপীয় পীড়ন (Temperature stress) ঃ সকল বস্তুই তাপে প্রসারিত হয় এবং ঠাণ্ডায় সংকুচিত হয়। এ ধরনের বিকৃতি বস্তুতে
কোন পীড়ন ঘটায় না। কিন্তু এ বিকৃতি প্রতিরােধ করলে বস্তুতে পীড়নের সৃষ্টি হয়। একে তাপীয় পীড়ন (Temperature stress) এবং
এ বিকৃতিকে তাপীয় বিকৃতি (Thermal strain) বলা হয়। তাপমাত্রায় পরিবর্তনের সাথে বিকৃতির পরিবর্তনের হারকে তাপীয় প্রসারণ
সহগ (Coefficient of thermal expansion) বলা হয়।



 সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাটেরিয়ালস্ নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয়সমূহ (The factors to be considered
during the selection of civil engineering materials) :
এ কথা অনস্বীকার্য যে, সিভিল প্রকৌশল নির্মাণে (Civil engineering construction) কাঠামাের জন্য মান-শ্রেণি, কাজের ধরন,
পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে প্রকৌশল সামগ্রীর ঈপ্সিত ধর্মাবলি অনুযায়ী এগুলাে নির্বাচন করতে হয়। এ
বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীগণকে নতুন উদ্ভাবিত সামগ্রী ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় এবং প্রচলিত সামগ্রী সম্ভাব্য নতুন
নতুন ক্ষেত্রে ব্যবহারের মানসিকতা রাখতে হয় যেন প্রচলিত সামগ্রীর বহুবিদ ব্যবহারের মাধ্যমে এর সর্বাধিক উপযােগিতা গ্রহণ করা
যায়। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীগণকে দেশীয় সামগ্রীর ব্যবহার, অর্থনৈতিক দিক হতে সাশ্রয়ী ও সামগ্রীর সহজপ্রাপ্ততার প্রতি সবিশেষ নজর
দিয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সাশ্রী নির্বাচন করতে হয় এবং স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত সামগ্রীকে অগ্রাধিকার দিতে হয়। উপযুক্ত সামগ্রী স্থানীয়ভাবে
পাওয়া না গেলে এবং উপযুক্ত সামগ্রীর জন্য খরচের পরিমাণ অত্যধিক হলে ক্ষেত্রবিশেষে অনেক সময় স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত অপেক্ষাকৃত
নিম্নমানের সামগ্রীকেও নির্বাচন করতে হয়।
সাধারণত ডিজাইনারগণ দুটি ক্ষেত্র হতে তথ্যাদি গ্রহণ করে প্রকৌশল সামগ্রী নির্বাচন করে থাকেন। ক্ষেত্রদ্বয় হলাে (ক) পূর্বে
বাস্তব ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সামগ্রীর কার্যকারিতা, সফল, স্থায়িত্ব ইত্যাদি সংক্রান্ত রেকর্ড ও জ্ঞান, কার্যকারিতা, সফলতা ইত্যাদি সম্পর্কে
পরীক্ষার ফলাফল, এবং (খ) কোন সামগ্রী নির্মাণে ব্যবহারের জন্য ডিজাইনারের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী নির্বাচন।
উপরোক্ত আলােচনার আলােকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলাে বিবেচনা করে প্রকৌশল সামগ্রী নির্বাচন করতে হয় ও
(ক) সামগ্রীর সহজলব্ধতা ও অর্থনৈতিক সাশ্রয়তা।
(খ) সামগ্রীগুলাের ধর্মাবলি।
(গ) সামগ্রী ব্যবহারে কী কী বিষয়ে যত্নবান হতে হবে।
(ঘ) নির্দিষ্ট সামগ্রী কী কী ধরনের হবে এবং এর জন্য অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা।
(ঙ) বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী তৈরিকরণের পদ্ধতি এবং এতে সামগ্রীর বৈশিষ্ট্যের উপর প্রভাব।
(চ) সামগ্রীগুলাের মধ্যে সাম্যতা সমন্বয়নের ক্ষেত্রে স্পেসিফিকেশনের পদ্ধতি।
(ছ) ঈপ্সিত ধর্ম পরিমাপের জন্য নিরীক্ষা (Testing) ও পরিদর্শনের পদ্ধতি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন