জিওটেকনিক-এর মৌলিক ধারণা (অধ্যায়-১)

সূচিপত্র
অধ্যায়-১
জিওটেকনিক-এর মৌলিক ধারণা
১.১ শিলা, মৃত্তিকা ও মৃত্তিকা প্রকৌশলের সংজ্ঞা
১.২ মৃত্তিকার উৎপত্তি এবং গঠন
বাংলাদেশের ভূ-উৎপত্তি ও গঠনের ইতিহাস
১.৪ মৃত্তিকা প্রযুক্তি বিদ্যার সীমাবদ্ধতা
১.৫ মৃত্তিকার শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি
১.৬ গ্রহণ শৈলী এএএসএইচও এবং ইউনিফাইড এএসটিএম শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি
১.৭ মাটির মাঠ সনাক্তকরণ
১.৮ মাটির সাধারণ ধর্মাবলি
কতিপয় প্রাথমিক সংজ্ঞা
ভয়েড রেশিও-এর ভিত্তিতে মাটির ত্রি-উপাদান চিত্র
পরােসিটির ভিত্তিতে মাটির ত্রি-উপাদান চিত্র
মৃত্তিকার ধর্মের উপর সমস্যাবলির সমাধান
চুল্লিতে শুকানাে পদ্ধতিতে জলীয় অংশের পরিমাণ নির্ণয়
পিকনােমিটারের সাহায্যে মৃত্তিকার আপেক্ষিক গুরুত্ব নিরূপণ

প্রথম
জিওটেকনিক-এর মৌলিক ধারণা
(Understand the Basic Concept of Geotechnie)
১.১ শিলা, মৃত্তিকা ও মৃত্তিকা প্রকৌশলের সংজ্ঞা
Define Rock, Soil and Soil Engineering)
শিলা (Rock) : অধিক শক্তিশালী এবং স্থায়ী সংশক্তি প্রন বল দ্বারা আবদ্ধ, প্রাকৃতিক অবস্থায় প্রাপ্ত খনিজ কণার সমম্বয়ে
গঠিত পদার্থকে শিলা (Rock) বলে । প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা ও মাটির মধ্যে তেমন কোন উল্লেখযােগ্য পার্থক্য নেই। শক্ত ও সঠিক
দৃঢ় শিলা আবহাওয়া জনিত কারণে আস্তে আস্তে দুর্বল শিলায় পরিণত হয়ে থাকে ।
মৃত্তিকা বিষয়ক বিভিন্ন পেশাদার ব্যক্তিবর্গ বিভিন্নভাবে মৃত্তিকার সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। যথা :
(ক) একজন ভূ-তত্ত্ববিদ ভূ-পৃষ্ঠের শক্ত আরকীকে মুক্তিকাই বলেন না। এমনকি নরম কাদাকেও তারা শিলা বলে আখ্যায়িত করেন।
(খ) কৃষিবিদ-এর মতে- মৃত্তিকা হলাে পৃথিবী পৃষ্ঠের উপরের এমন এক ধরনের বস্তু যেখানে বৃক্ষ জন্যে এবং বৃদ্ধি লাভ করে।
(গ) ভূ-তত্ত্ববিদের-এর মতে- মৃত্তিকা হলাে ভূ-পৃষ্ঠস্থ পাতলা এমন একটি স্তর যতদূর পর্যন্ত বৃক্ষের শিকড় বিস্তৃত হতে পারে ।
(ঘ) ইঞ্জিনিয়ার-এর মতে- মৃত্তিকা বিভিন্ন খনিজ কশার সমন্বয়ে গঠিত এক ধরনের প্রাকৃতিক পূরক পদার্থ যার ভিতর জৈব
থাকতে পারে অন্যান্ত না থাকে সরে এবং শক্তিশালী ও স্থায়ী সংসণ্ডি বলের দ্বারা আবদ্ধ নয় এবং যাদের।
পানিতে নাড়লে কণাগুলাে সহজেই পৃথক করা যায় তাকে মৃত্তিকা বলে।
জিওটেকনিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সংজ্ঞা ; ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যার যে বিষয়ে মৃত্তিকার বিভিন্ন ধর্ম, আচার, আচরণ; ইঞ্জিনিয়ারিং -
পদার্থ নির্মাণ এবং ভিতের সামগ্রী) হিসেবে মৃত্তিকার ব্যবহার, কাঠামাের ভিত্তির ধরন নির্বাচন এবং নির্মাণ কৌশল সম্বন্ধে
সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং মৃত্তিকার শ্রেণিবিন্যাস সম্বন্ধে বিস্তারিত আলােচনা করা হয় তাকে সয়েল মেকানিকস, মৃত্তিকা ইঞ্জিনিয়ারিং বা
জিওটেকনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বলে। কণার সমন্বয়ে গঠিত এক ধরনের প্রাকৃতিক পূরক (Natural. Aggregatc), যার ভিতর
জৈব পদার্থ থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে এবং যা পৃথিবী পষ্ঠ হতে বেশ গভীর পর্যন্ত বিরাট অঞ্চল জুড়ে অবস্তৃিত।
বােল্ডার, ঘাভেল, বালি, পলি এবং কালার সমন্বয়ে মৃত্তিকা গঠিত।
টারজাগি (TaurzigFai) এর মতে- শিলার যাজিক এবং রাসায়নিক বিয়ােজনের ফলে সৃষ্ট পদার্থ যার সঙ্গে জৈব পদার্থ মিশ্রিত
থাকতে পারে এমন তলানি এবং অন্যান্য একীভূত হয়নি এমন পুঞ্জিভূত খনিজ কণা বিষয়ক পদার্থের উপর ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে।
মেকানিকস এবং হাইড্রোলিকস এর সূত্রের প্রয়ােগকেই সয়েল মেকানিকস্ বলে।
১.১.১ মৃত্তিকা প্রযুক্তি বিদ্যার আওতা।
(Scope/Field of Soil Engineering)
মৃত্তিকা প্রযুক্তি বিদ্যার আওতা বা ক্ষেত্র অত্যন্ত ব্যাপক। মৃত্তিকা বিষয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয় ।
বিভিন্ন ভৌত ধর্ম জানার জন্য বিভিন্ন মৃত্তিকার শ্রেণিবিন্যাস এবং পরীক্ষা ছাড়াও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর নিচের ক্ষেত্রসমূহে
বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে মৃত্তিকা প্রযুক্তি বিদ্যার সাহায্য নিতে হয়।
(ক) ভিত্তি ডিজাইন এবং নির্মাণে {Foundation Design
and Construction) : সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভূমিলে ;
ক্ষেত্রে ভিত্তি ডিজাইন ও নির্মাণ একটি গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় । ইমারত, ব্রিজ, পাকা রাস্তা, সুড়ঙ্গ পথ, বাঁধ
ইত্যাদি কাঠামাের ভিত্তি মৃত্তিকায় স্থাপন করতে হয়।
সুতরাং মাটির ভারবহন ক্ষমতা, ভিত্তির নিচে পীড়ন
এর বণ্টন, ভিত্তি বসে যাওয়া, ভূ-গর্ভস্থ পানির প্রভাব
এবং কম্পনের প্রভাব ইত্যাদি সম্পর্কে জানা
দরকার। ভিত্তির ধরন ও গভীরতা নির্ধারণ, ভূ-গর্ভস্থ
সুলতল। অবস্থান, ভিল্লির তলার মাটির।
সংকোচন-প্রসারণ ইত্যাদি মৃত্তিকা প্রযুক্তি বিদ্যার।

জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
১২ মৃত্তিকার উৎপত্তি এবং গঠন
(Describe Origin and Formation of Soil)
ইঞ্জিনিয়ার-এর মতে কঠিন শিলার আবহুকরণ weathering) এর ফলে সৃষ্ট জটিল পদার্থকে মাটি বলে। পৃথিবী পৃষ্ঠে
অনবরত পর্যায়ক্রমিক ভূ-তাত্ত্বিক চক্রের প্রভাবে মাটি গঠিত হয়। আবহুকরণ, পরিবহন, তলানি পড়া এবং উন্ধে উত্তোলন
ইত্যাদি বার বার সটাকে ভূ-তাত্ত্বিক চক্র বলে। পর্যায়ক্রমিক তাপমাত্রার পরিবর্তন, পানি, বাতাস ও বরফ প্রবাহের ফলে বাতী,
ছপালা এবং প্রাণীর দ্বাৱা শিলা কেটে যাওয়া ইত্যাদি ঘটনা ঘটাকে আবহণ বলে। আঠালােগুণহীন মাটি শিলার বাহ্যিক
বিশ্লোজনের ফলে সৃষ্টি হয়। অক্সিডেশন, হাইড্রেশন, কার্বোনেশন এবং জৈব এসিড ও পানি চোষানাের ফলে শিলার রাসায়নিক
পরিবর্তনকে রাসায়নিক অবিহুকরণ বলে। কাদা মাটি রাসায়নিক অধিকরণের ফলে সৃষ্টি হয়।
আবহসহকরণের ফলে সৃষ্টি মাটিকে দু শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। যথা :
(i) অবশে মৃত্তিকা : (Residual Sol) (ii) পৱিবাহিত মৃত্তিকা : (Transported soil] ।
অবশেষ মৃত্তিকা (Residual Soil) : কঠিন শিলা নিজস্ব স্থানে নিয়ােজন এবং বিভাজের পর যে মাটির সৃষ্টি হয় তাকে
3)
Residual Soil বলে : এ মাটি অল্প গভীরতা পর্যন্ত বিস্তৃত। মূল শিলা স্তর (Parent rock) এর ঠিক উপরেই এ
মাটি অবস্থান করে। গ্রানাইট, ব্যাসল্ট-জাতীয় আগ্নেয় শিলা এবং বেলে পাথর, শেল ও চুনা পাথর জাতীয় পাললিক
শিলা Residual soil এন্ন আদি শিলা।
(ii) পরিবাহিত মৃত্তিকা (Transported Soll} : ক্ষয়প্রাপ্ত শিলা, পানি, বায়ু, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ইত্যাদির দ্বারা পরিবাহিত
হয়ে এক জরিগায় জমা হয়ে যে মাটির সৃষ্টি হয় তাকে Transportced Soil বলে। এ মাটি বেশি গভীরতা পর্যন্ত
পাওয়া যায় ।
''ransported Soil. কে 'আবর নিম্নলিখিত ভাবে বিভক্ত করা যায় ।
(ক) পানিবাহিত মাটি।
(খ) মাধ্য কৰ্মণ বল দ্বারা বাহিত মাটি।
(গ) বাতাসবাহিত মাটি।
(4) বরবাহিত 'মাটি।
• মাটি গঠন প্রক্রিয়া {For Imation of soil) ভৌত এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ক্ষয়িবন বিচূর্ণ, বিয়ােজন এবং
বিশিষ্টায়ন এবং কখনাে কখনাে পরিবহনের মাধ্যমে মাটির গঠন প্রক্রিয়া সংঘঠিত হয় ।
নিয়ে বিস্তারিত আলােচনা করা হলাে :
(7) o faci (Physical Disintegration) :
(১) তাপমাত্রায় হ্রাস-বৃদ্ধি {Change of temperature) : শিলা বিভিন্ন খনিজ পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত এবং
এ'গ্রালার তাপীয় প্রসার্কের মাত্রা ও ভিন্ন ভিন্ন। ফলান্ত পুনঃ পুন তাপ ও শৈত্যের প্রভাবে শিলার উপাদানগুলো।
ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় প্রসারিত ও সংকোচিত হয়ে শিলা খস্তিত বিখণ্ডিত হয় এবং উৎপন্ন শিলা কণাগুলাে মাটি পঠন করে ।
(২) ঘর্ষণ (Abrasion) : পানি, তুষার, হিমবাহ, বার] ইত্যাদি প্রতিনিয়ত শিলা পৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার।
ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং ক্ষাপ্ত শিলাকণা মৃত্তিকা গঠন করে।
(৩) গাছ গছিড়ার শিকড় (Roots of plai rata) : শিলাস্তরের ফাটালে গাছ গাছড়া শুনালে এগুলাের শিকড় বৃদ্ধি
প্রাপ্ত হওয়ার ফলে শিলার স্তরে প্রতিনিয়ত চাপ পড়ে এবং শিলাকে বিয়ােজিত করে মটি গঠন করে।
(৪) তুষার ক্রিয়া (Action of ice) ; শিলাস্তরের সুক্ষ্ম ছিদ্র পথে বা সরু ফাটলে পানি প্রবেশের পর শৈত্যের
প্রভাবে পানি বরফে পরিণত হলে আয়তনে বৃদ্ধি পায় এবং শিলার স্তর খণ্ড বিখণ্ড করে শিলা কনার সৃষ্টি করে।
শিলা কণা মাটি গঠন করে

(খ) রাসায়নিক বিজেন (Chemical Decomposition) :
রাসায়নিক বিশ্লিষ্টায়নে শিলার উপর আবহক্রিয়ার প্রভাবে শিলার খনিজকণাগুলাে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন।
উপাদানে পরিণত হয়ে মৃত্তিকা গঠন করে। এ জাতীয় মৃত্তিকার গুণাগুণ মূল শিলা হতে ভিন্ন ধরনের । সচরাচর কাদা।
জাতীয় মৃত্তিকা রাসায়নিক বিশ্লিষ্টায়নের মাধ্যমে গঠিত হয়ে থাকে এবং এ জাতীয় মৃত্তিকার নম্যতা (Plasticity)
গুণাবলী দেখা যায়। প্রকৃতিতে সচরাচর শিলাস্তরে নিম্নের রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলাে কাজ করে মৃত্তিকা গঠন করে থাকে।
(১) পানিযােজন (Hydration) : শিলার উপাদানগুলাের সাথে পানির সংমিশ্রণের ফলে নবতর রাসায়নিক যৌগ
সৃষ্টি করে এবং আয়তনের পরিবর্তন ঘটিয়ে শিলা বিশ্লিষ্ট হয়ে শিলা কণার সৃষ্টি করে এবং মৃত্তিকা গঠন করে।
(২) অক্সিডেশন (Oxidation) : শিলার বিভিন্ন খনিজ কণার সাথে বায়ুর অক্সিজেনের বিক্রিয়ার শিলা বিশ্লিষ্ট হয়
এবং বিশ্লিষ্ট শি কণাগুলো মৃত্তিকা গঠন করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন